১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের এক কোটি মানুষ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যা এড়াতে পার্শ্ববর্তী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলমান—হিন্দু—বৌদ্ধ—খ্রিস্টান যেমন এক সাথে রয়েছে, তেমনি এক সাথে যুদ্ধ করে জয় ছিনিয়ে এনেছে। তাই বাংলাদেশের উপায় নেই অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র না হয়ে। ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ঠিক তেমনি শরনার্থীদের সাহায্য করার দায়িত্বও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
পাকিস্তানিদের দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার ফল- আমরা জাতি হিসাবে অনেক ভোগ করেছি এবং ভোগ করেছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা। পাকিস্তানি শাসকদের অনেকেই তখন বার্মা সফরে যেতেন। সফরে গিয়েছিলেন আইয়ুব খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো। আসলে তারা ঘুরতে যেতেন, বেড়াতে যেতেন। আবার বর্মি সরকারের অনাড়ম্বর রাষ্ট্রীয় জীবনের সাথে নিজেদের অবস্থা মিলিয়ে নিজেদেরকে রীতিমত রাজা—বাদশা ভাবতেন। সে অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ চেয়েছিলাম। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর আসলেই কিন্তু বার্মা শাসিত ছিল। কারণ বাঙালি জাতীয়তাবাদী শি৩র তেজের পাশে বর্মি জাতীয়তাবাদের ভবিষৎ কী হবে, এ নিয়ে বর্মিরা চিন্তিত হয়ে পড়ে। দেশে বিদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা ভাবিয়ে তোলে বর্মি সরকারকে। ১৯৭৪ সালে বর্মি সংবিধান আরাকানের প্রশাসনিক পৃথক ঐতিহ্য মেনে নেয়। এরপর আরাকানি মুসলমানদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন আদৌ বন্ধ করা হয়নি। ঢাকায় ক্রমাগত এসব সংবাদ আসার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যাচার বন্ধ না হলে এর খারাপ পরিণতির কথা সংবাদ মাধ্যমে জানিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্তর্জাতিকভাবে নন্দিত নেতা যখন বলেন যে, তার পাশ্ববর্তী দেশে অত্যাচার অবিচার চলছে, তখন বর্মিদের চুপসে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এমন নেতাকে আমরা ধরে রাখতে পারলাম না। ঘাতকদের হাতে তিনি নির্মমভাবে নিহত হলেন। কাজেই আশেপাশের অনেকের মতই বর্মি সরকার পুলকিত হল। জিয়াউর রহমানের পক্ষে দধম্নত কোন আন্তর্জাতিক ভাব মূর্তি গড়ে তোলা সম্ভব ছিল না। তাই তিনি সার্ক গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে অগস্র র হতে চাইলেন। কাজেই উদারতা প্রদর্শনের রাস্তায় তাঁকে হাটতে হল। ১৯৭৮ সালে এ সুযোগে বর্মি সরকার তাঁর স্বরূপে আবিভূর্ত হল। তারপর থেকে ক্রমাগতভাবে আরাকানি মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশে ̈ চলছে হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, জেলে পুরে অকথ্য নির্যাতন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তাঁর আব্বার মত মানবিক ছিলেন বলেই আরাকানি মুসলমানদের পাশে এসে দাঁড়ালেন এবং বাংলাদেশে রোহিংগাদের আশ্রয় দিলেন। তাই তিনি মানবতার জননী হয়ে গেলেন।
জাহিদুল কবির